অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের আয়োজনে ‘পরম সত্যের হৃদয়ঙ্গম’ (Realizing Divine Harmony) শিরোনামের ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ’ (OPSG)-এর ৯ম প্রাচ্যচিত্রকলা প্রদর্শনী অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টস ১২ই মার্চ ২০২২ বিকেল ৫:৩০ শুভ উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রাচ্যকলার বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মাননীয় ডিন, অধ্যাপক নিসার হোসেন, অরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা জনাব মিখাইল আই. ইসলাম ও শিল্পানুরাগী জনাব জেরিন মাহমুদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের চেয়ারপার্সন জনাব নীলু রওশন মুর্শেদ। উল্লেখ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে থেকে জুরি কমিটি দ্বারা বাছাইকৃত তিনটি শিল্পকর্মের জন্য ৩ জন শিল্পীর হাতে পুরষ্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও প্রাইজমানি তুলে দেওয়া হবে। ‘অবিন্তা গ্রান্ড প্রাইস’ গ্রহণ করবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী হাবিবা আসলাম ও একই বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই পূর্ণিমা আক্তার ‘অবিন্তা এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’
গ্রহণ করবেন। দেশ-বিদেশের শিল্পী, শিল্পানুরাগী, শিল্প সমাজদার ও দর্শকদের মিলন মেলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে।
উন্মুক্ত আহ্বান (Open Call)-এর মাধ্যমে সারাদেশ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক, অ-প্রাতিষ্ঠানিক, স্বশিক্ষিত শিল্পীদের প্রাচ্যবৈশিষ্ট্যের নির্বাচিত ৫৪ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে এই প্রদর্শনীতে। প্রাচ্যরীতির বিখ্যাত ওয়াশ পদ্ধতির চিত্রকলা; গোয়াশ, টেম্পারা ও চায়নিজ ইঙ্ক মাধ্যমের চিত্রকলাসহ অ্যাক্রিলিক, মিশ্র মাধ্যম ও নিউ-মিডিয়ার কাজগুলো দর্শকদের আনন্দ দেবে বলে আশা প্রকাশ করা যায়। এছাড়া, ক্যালিগ্রাফি ও মিনিয়েচার প্রদর্শনীতে বিশেষ মাত্রা যুগিয়েছে বলা যায়। আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, প্রাচ্যচিত্রকলায় বিষয়, আঙ্গিক, করণ-কৌশল এবং উপস্থাপনার স্বতন্ত্র ও অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যৈর এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শিল্পের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সহায়তা করবে।
অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টস দীর্ঘদিন ধরে শিল্পের বিকাশে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছেন। অবিন্তা গ্যালারি ও OPSG-র যৌথ উদ্যোগে এই প্রদর্শনীটি আয়োজন করার উদ্দেশ্য হলো—শিল্পী এবং শিল্প অনুরাগীদের সাংস্কৃতিক শিকড় অনুসন্ধানে অনুপ্রাণিত করা এবং আমাদের নিজস্ব শিল্প-ঐতিহ্যকে লালন করা। বিভিন্ন বয়সের বাংলাদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রদর্শনীটি আরও মাত্রা যুগিয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক নিরীক্ষামূলক চিত্রকর্ম, শিক্ষকদের চিত্রকর্ম, স্বশিক্ষিত শিল্পীদের প্রাচ্যধারার চিত্রকর্ম বিশ্বশিল্পকলায় বাংলাদেশের স্বকীয় পরিচিতির বহন করবে বলেও আশা করা যায়।
এই প্রদর্শনীর চিত্রকর্মে প্রাচ্যচিত্রশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যাবে। ভারতীয় ও চীনা শিল্পের ষড়ঙ্গের নীতিগুলিকে অনুসরণ করে প্রাচ্যের দরবারি; সমকালীন আধুনিক, ধারণাগত এবং ঐতিহ্যগত শিল্প প্রবণতাগুলিকে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ বরেণ্য শিল্পী আবদুস সাত্তার, রফিক আহমেদ, অমিত নন্দী প্রমূখ শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম দরবারী ঘরানার অনুষঙ্গ জারিত। শিল্পী অমিত চন্দ্রের কাজে রয়েছে বেঙ্গল স্কুল ঘরানার লোভনীয় জলরং ওয়াশ ও ঐতিহ্যবাহী লিরিক্যাল লাইনের ব্যবহার। আবার শিল্পী নিখিল দাস এবং শিল্পী টাইগার নাজিরের চিত্রজমিন ও বিষয় পটশিল্পীদের আঙ্গিকে উপস্থাপিত।
ওয়াশ পদ্ধতিতে অনুষঙ্গে শিল্পী সুমন কুমার বৈদ্য, আয়েশা আক্তার ও কামরুজ্জাহার ল্যান্ডস্কেপ নিশ্চয়ই দর্শকদের মুগ্ধ করবে। শিল্পী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গীতের রাগ-রাগিনী অনুপ্রাণিত প্রকৃতিদৃশ্য দর্শকদেরকে বাস্তব ও বিমুর্ত রসদ যোগাবে। বেঙ্গল স্কুলের জলরঙ ধোঁয়া কৌশলে বেশিরভাগ শিল্পকর্মেই দেশীয় শিল্পসংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বয়ান, সমকালের বিষয়ভাবনা ও আধুনিকতা উঠে এসেছে।
ধ্রুপদি এবং লোকজ ধারার নানা অনুষঙ্গ প্রায় প্রতিটি শিল্পীর কাজেই সংযুক্ত হয়েছে। জ্যোতি পালের কাজে দেখা যাবে অজন্তা গুহাচিত্রের কালজয়ী ধ্রুপদিও লোকজ চিত্র-উপাদান। যা উপস্থাপন করেছেন বিশেষ প্রতিকী ঢংয়ে। বাংলার টেরাকোটার ঐতিহ্যের ক্ষয়িষ্ণুতা বিষয়ে গবেষণামূলক বক্তব্য প্রকাশ করেছেন সামিনা জামান। উর্মিলা সিংহের মিনিয়েচারে বাংলার লোকসংস্কৃতির সাপুড়ে জীবন ও গ্রামীণ সমাজ বিনোদনের বিলুপ্তপ্রায় দৃশ্যগুলো উঠে এসেছে।
রেখা হলো প্রাচ্যকলার প্রাণ। বরেণ্য শিল্পী বীরেন সোম, শাকিলা খান চয়ন এবং মুসলিম মিয়ার কাজে সেই রেখা প্রধান কাজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর টেম্পারা মাধ্যমের বিশেষ করণকৌশলে ‘লক দ্য সেক্যুলার ডোর’ বিষয়ক চিত্রকর্ম চিরকালীন বক্তব্য হিসেবে বিবেককে জাগ্রত করবে। নাজিব তারেকের লাল এবং কাল রঙের ফর্ম ও রেখাপ্রধান উপস্থাপনায় রয়েছে প্রাচ্য অনুষঙ্গের আধুনিকতা। নিউ মিডিয়ার এই আধুনিকতা রয়েছে শিল্পী দীপ্তি রানী দত্ত এবং সুকৃতি আদিত্যের কাজেও।
শিল্পী নাজমুল হক বাপ্পির কাজের প্রকৃতির সৌন্দর্য উঠে এসেছে চাইনিজ পেন্টিংয়ের করণকৌশল ধারায়। দ্বিমাত্রিক রং লেপনে অলংকরণধর্মী নকশাপ্রধান প্রকৃতি মণিদীপা দাশগুপ্তর ক্যানভাসে। শিল্পী সৌরভ চৌধুরীর কাজে এসেছে লোকশিল্পের নানান অনুষঙ্গ। বেশ কিছু কাজ সত্যিকার অর্থে আমাদের সমাজের আবেগ, নস্টালজিয়া এবং জীবনধারাকে প্রতিফলিত করে। শিল্পী সঞ্জয় চক্রবর্তীর মতো কোনো কোনো শিল্পী আমাদের ঐতিহ্যগত পেইন্টিংগুলির মোটিফ, আকর্ষণীয় লাইন এবং বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে ধারণাগত চিত্রগুলি চিত্রিত করেছেন। সুতরাং, দর্শকরা সম্পূর্ণ ওয়াশ পেইন্টিং, টেম্পেরা, ক্যালিগ্রাফি, প্রিন্ট, নতুন মিডিয়া কাজ এবং আরও অনেক কিছু দেখার সুযোগ পাবেন এই প্রদর্শনীতে।