পাহাড়ের চিত্রবুনন প্রতিষ্ঠিত করেছি অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে । প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে সমতলের শিল্পীদের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে কাজ করতে অনেক লম্বা এক পদযাত্রা পাড়ি দিতে হয়েছে। তখন আমি আমাকেই দেখেছি এই পথে প্রতিকূল স্রোতে যুদ্ধ করে এই অবস্থানে আসতে। সেই ভাবনা থেকে এথনিক আর্টিস্ট ফোরাম এর সৃষ্টি । আমি চেয়েছি এই ফোরামের মাধ্যমে এমন এক প্লাটফর্ম তৈরি হবে যেখানে দাঁড়িয়ে শিল্পীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
এথনিক আর্টিস্ট ফোরাম এর মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের আদিবাসী শিল্পীদের প্রতিভাকে বিকশিত করা, তাদের মেধাকে আলোকিত করার জন্য এই ফোরাম কাজ করবে।
অনেক প্রতিভাবান শিল্পীরা সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং অনুপ্রেরণার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে শিল্পীরা হারিয়েও যাচ্ছে সংস্কৃতিক বলয় থেকে। তাদের এ প্লাটফর্ম ধরে রাখতে হলে দরকার তাদের শিল্পচর্চায় সহযোগিতা করা। যেমন –আর্ট ক্যাম্প, আর্ট ওয়ার্কশপ, সেমিনার, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, নিয়মিত আর্ট এক্সিবিশন এবং গবেষণা।
এই ফোরাম প্রতিবছর সারা বাংলাদেশে প্রতিভাবান শিশুশিল্পী এবং শিল্পীকে খুঁজবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে, শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মেধাবী তার মেধা এবং মননকে পাদ–প্রদ্বাপ এ আনতে পারছে না, অর্থনৈতিক সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সহযোগিতার কমতি থেকে। এথনিক আর্টিস্ট ফোরাম ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত করে ৮৫ জন শিল্পীর সমন্বয়ে। এর মধ্যে ৫০ জন প্রথম অংশগ্রহণ করে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত নৃ–গোষ্ঠী শিল্পীদের নিয়ে আর্ট ক্যাম্পে। এই ক্যাম্প এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ৫০ টি আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতিকে সংগ্রহ করা এবং সংরক্ষণ করা চিত্রকলার মাধ্যমে। যা একটি মাইলফলক হয়ে থেকে যাবে বাংলাদেশের আদিবাসীদের সংস্কৃতিতে। এভাবে যাত্রা শুরু এর মধ্যে নবীন শিল্পীদের স্কলারশীপ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমি আবু সোবহান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর আওতায় শিল্পীদের নিয়ে এসে প্রতিবছর ১৩ জন শিল্পীদের স্কলারশীপ এর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই ট্রাস্ট শুধুমাত্র আদিবাসী শিল্পীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে অনুদান দিয়ে থাকে। এ বছরের প্রদর্শনী রাঙামাটিতে একটি আর্ট ক্যাম্পে করা চিত্রকলা দিয়ে উদ্বোধন হতে চলেছে। ক্যাম্প টি ২০১৯ সালে জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০/২১ কোভিড এর জন্য সমগ্র কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ২০২২ সালে ক্যাম্প এর কাজ দিয়ে আমরা প্রদর্শনী করতে চলেছি।
মোট ৪৪ জন শিল্পীর ৬৫ টি শিল্পকর্ম রয়েছে। মাধ্যম হিসেবে কাগজে জলরং এর পাশাপাশি ক্যানভাসে এক্রেলিক এর কাজ ও রয়েছে । রাঙ্গামাটির মনোমুগ্ধকর নিসর্গকেই বিশেষ করে শিল্পীরা তাদের কাজের বিষয়বস্তু নির্বাচন করেছে । আশাকরি শিল্পকর্ম গুলো দর্শকদের ভালোলাগা দেবে ।
বার্জার পেইন্ট’সকে ধন্যবাদ আর্ট ক্যাম্পটি সম্পন্ন করতে যাবতীয় সহযোগিতার জন্য, অবিন্তা গ্যালারি অফ ফাইন আর্টস’কে ও ধন্যবাদ এথনিক আর্টিস্ট ফোরাম এর শিল্পীদের মেধাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে প্রদর্শনীর আয়োজন এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য।